'পাবলিশ অর পেরিশ- Publish or Perish'
তবে আমার ধারণা ছিল কথাটা যথেষ্ট প্রাচীন এবং আমি মনে করি, কেবল তথাকথিত অ্যাকাডেমিয়া নয়, অভিযান সাধনাতেওএই কথা প্রযোজ্য। কারণ অভিযানের যাথার্থ শিক্ষায়, ট্রফি শিকারে নয়।
(এক্ষেত্রে 'ট্রফি হান্টিং'কথাটা আমি আক্ষরিক কম এবং রূপকার্থে বেশী ব্যবহার করতে চেয়েছি। কারণ, আফ্রিকার কোন এক বিপন্ন প্রজাতির প্রাণী শিকার এবং মাউন্ট এভারেস্ট আরোহণ- এই দুটিই আজ একই গোত্রে পড়ে গেছে। )
হ্যাঁ, অভিযাত্রীরাওকিছু সত্য, কিছু প্রশ্নের উত্তর আজও খুঁজে আনেন এবং বিশ্বকে তা জানানোর চেষ্টা করেন। সেই অনুসন্ধিৎসু 'পথ চলাতেই'তাঁরা 'আনন্দ'খুঁজে পান।
রিচার্ড ফ্রান্সিস বার্টন, পরবর্তী কালে এরিক শিপটন, ফ্র্যাংক স্মাইথ এবং বিল টিলম্যানদের লেখা কেবল 'চাঁদ উঠেছে-ফুল ফুটেছে'কিংবা 'দুর্গম গিরি- চল জয় করি'নয়; বরং মানুষের সমাজ, বিজ্ঞান, দর্শন এবং আত্ম-জিজ্ঞাসার এক একটি দলিল।
আমার এও মনে হয়, রিচার্ড বার্টনের (অভিনেতার কথা বলছি না) অভিযাত্রী স্পিরিট এবং কাজ নিয়ে বাংলা ভাষায় একটা কোন কম্প্রিহেন্সিভ কাজ হওয়া উচিৎ। ওনাদের সময়ে ঔপনিবেশিক 'অ্যাডভান্টেজ এবং প্রিভিলেজ ছিল এবং তাহা অন্যায়'- এই বিচারধারাকে একটু সাইডে সরিয়ে রেখে করলে হয়ত এখনও অনেক কিছু শেখা সম্ভব। তবে অভিযাত্রীদের বিজ্ঞান সাধনা এবং অবদানের নিরিখে আমি ফ্রিৎসফ ন্যানসেন কিংবা অ্যালেক্সান্ডার ফন হামবোল্টকে অনেক উচ্চ স্থানে রাখি। এ প্রসঙ্গে একটি অসাধারন বইয়ের কথা উল্লেখ না করে পারা গেল না। বইটির নাম- Measuring The World, লেখক ড্যানিয়েল কেলমান। পড়ে দেখতে পারেন। অনলাইনে পাওয়া যায়। আর একটা অসাধারণ ওয়েবসাইটের খবরও আপনাদের দিয়ে রাখি- Explorers Podcast. বিশ্বের সর্বকালের সেরা অভিযাত্রীদের জীবন এবং তাঁদের কাজ এখানে পডকাস্টের আকারে রাখা আছে। বই পড়তে যখন ভাল লাগবে না, তখন চোখ বুজে শুনতে পারেন। ভাল লাগবে।
এই পডকাস্ট গুলো এক একটা ভ্যাক্সিনের মত। কূপমণ্ডূকতার অসুখ ধরবে না।
( এজেন্সির প্যাকেজে অ্যাডভেঞ্চার কেনা লোকজন এবং তাঁদের পৃষ্ঠপোষকেরা এই কথার অর্থ বুঝবেন না। তবে, ভবিষ্যতে তাঁদের জন্য কোনও আশাও নেই, ভালবাসাও নেই। কারণ আমি বিশ্বাস করি আমাদের পরের প্রজন্ম প্রকৃত অ্যাডভেঞ্চারকে চিনে নেবে এবং তার সঠিক মুল্যায়ন করবে।)
যাইহোক, এবার নিজের ঢাক নিজেই পেটানোতে আসি।
যে কথা বলতে গিয়ে এতটা ভূমিকা করে ফেললাম তা হল- আমার নিজেরও একটি অভিযান ধারণা এবং সাধনারয়েছে। তার বেশীর ভাগটাই এখনও লেখা হয়নি। হিমালয়ে আমার অভিযান এবং নতুন পথের অনুসন্ধান ইত্যাদি বিষয়ে 'দি হিমালয়ান জার্নাল'এবং 'দি আল্পাইন জার্নালে'আমার কয়েকটা রিপোর্ট ছাপা হয়েছে ঠিকই কিন্তু বিস্তারিত এবং সর্বাঙ্গীণ ভাবে এখনও লেখা হয়নি।
আমার আফ্রিকার কাজ এবং আজাদ হিন্দ ফৌজের পথে চলার কাজ- এই গুলোই আপাতত ছাপা বইহিসেবে প্রকাশিত। 'কাজ'-ই বললাম, কারণ দুবার সাইকেল নিয়ে আফ্রিকার দুপ্রান্তে পাড়ি দেওয়া এবং আজাদ হিন্দ ফৌজের যাত্রাপথ অনুসরণ করা - এগুলোর কোনটাই কোনও ট্রাভেল এজেন্সির প্যাকেজ ট্যুর ছিলনা। এই প্রত্যেকটা বেরিয়ে পড়াই জন্ম নিয়েছিল ভবঘুরের চরম কৌতূহল থেকে, কিছু প্রশ্নের উত্তর খোঁজার তাগিদ থেকে।
'অতএব আফ্রিকা', 'আবার চাঁদের পাহাড়', 'গঙ্গা থেকে চিনশা', 'Sahara Soliloquies' এবং 'দেশনায়কের পথে'- আমার যেকোনো একটা বই পড়লেই দেখতে পাবেন এগুলো নিছক ভ্রমণ কাহিনী কম, ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং গবেষণালব্ধ প্রবন্ধ অনেক বেশী।
কোনোদিনই সংবাদ মাধ্যমে প্রচার কিংবা বিশেষ বই প্রকাশ অনুষ্ঠান- এই ধরণের কিছু আমার পক্ষে করা সম্ভব হয়নি। তাই নিজের ব্লগ এবং সোশ্যাল মিডিয়াই আমার সম্বল। এই মুহুর্তে যেসব বইগুলি অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে সেগুলোর ছবি নীচে দিলাম। বাংলা বইগুলি 'ছাপা বই'। 'Sahara Soliloquies'- Kindle eBook. বইয়ের ছবিগুলিতে ক্লিক করলে কেনার অনলাইন লিংক খোলা উচিৎ।
ইচ্ছে হলে লিখব, না হলে লিখব না! 😆
আর আপনারাও ইচ্ছে হলে পড়বেন, না হলে পড়বেন না।